অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক: টাকা চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ স্তরে বড় ধরনের রদবদলের পরদিন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ তাদের তদন্ত শুরু করেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে রাখা একাউন্ট থেকে ফিলিপাইনে যাওয়া আট কোটি দশ লাখ ডলার আদৌ উদ্ধার করা যাবে কিনা তা বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এখনও পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না।
জানা গেছে, এই অর্থ চুরি এবং উদ্ধার নিয়ে ফিলিপাইনের সংসদে এক শুনানিতে স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নিচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুরি যাওয়া অর্থের বড় একটি অংশ ফিলিপাইনে জুয়া খেলার ক্যাসিনোতে চলে গেছে বলে ঐ শুনানি থেকে ধারণা পাওয়া গেছে।
ঘটনার একমাসেরও বেশি সময় পর এখন ঢাকায় যে মামলা করা হয়েছে, তাতে অর্থ চুরি, পাচার এবং সাইবার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই মামলাতেই পুলিশের তদন্ত বিভাগ সিআইডি বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের তদন্ত কাজ শুরু করে।
সিআইডি পুলিশের কর্মকর্তা মির্জা আব্দুল্লাহ হেল বাকি বলেছেন, টাকাটা কিভাবে চুরি হলো, সে বিষয়েই তাদের তদন্তে জোর দেয়া হচ্ছে।
এখন তদন্তের শুরুতে তারা মূলত তথ্য সংগ্রহ করছেন।
তদন্তের পাশাপাশি চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের চেষ্টার কথাও বলছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির এই ঘটনায় শ্রীলংকা থেকে দুই কোটি ডলার উদ্ধার করা গেছে।
আট কোটি দশ লাখ ডলার যা ফিলিপাইনে চলে গেছে, সেই অর্থ উদ্ধারের ব্যাপারে এখনও নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না।
এনিয়ে ফিলিপাইনের সিনেটে শুনানিতে পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেয়ার পর সেখানকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জন গোমেজ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, চুরি যাওয়া অর্থের বড় অংশ ফিলিপাইনে জুয়া খেলার ক্যাসিনোতে যে চলে গেছে, তা উদ্ধারের জন্য দেশটিতে আইনে কি আছে, সেটা খতিয়ে দেখে তারা তা বাংলাদেশকে জানাবে।
তিনি বলছিলেন, “টাকাটা ফিলিপাইনে কিছু অ্যাকাউন্টে যে জমা হয়েছিল, সেটা তাদের সিনেটের শুনানিতে প্রমাণিত হয়েছে। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে যে তদন্ত হয়েছে, সে সব প্রতিবেদন দেশটির পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। সিনেটের শুনানিতেও তা এসেছে।”
তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টা তদন্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআই এর একটি দলও ফিলিপাইনে গেছে।
অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনে আটক সন্দেহভাজনদের সিনেটের শুনানিতে হাজির করা হয়।
সেখানকার যে ব্যাংকের বিরুদ্ধে মুল অভিযোগ এসেছে, সেই ব্যাংকের ম্যানেজার জাপানে পালানোর চেষ্টার সময় বিমান থেকে তাকে নামিয়ে এনে আটক করা হয়েছে।
এমন তথ্য ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে জানিয়েছে।
তবে ঘটনার ব্যাপারে মামলা বা আইনগত ব্যবস্থা কি নেয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ জানতে চেয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
জেনারেল জন গোমেজ আরও বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থ চুরির এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে ১৪টি দেশ ফিলিপাইনের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
দেশটি তাদের ব্যাংকিং খাত নিয়ে ভাব মূর্তির সংকটে পড়েছে।
ফলে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার এবং জড়িতদের চিহ্নিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
ফিলিপাইনের সিনেটে মঙ্গলবার আবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
সুত্র, বিবিসি